শান্তির নামে আত্মসমর্পণ? ফ্রান্সের স্বীকৃতি ঘোষণায় বিতর্ক, হামাস  ‘সন্ত্রাস’ স্বীকারে হতবাক মুসলিম বিশ্ব

শান্তির নামে আত্মসমর্পণ? ফ্রান্সের স্বীকৃতি ঘোষণায় বিতর্ক, হামাস ‘সন্ত্রাস’ স্বীকারে হতবাক মুসলিম বিশ্ব

“শান্তির নামে আত্মসমর্পণ? ফ্রান্সের স্বীকৃতি ঘোষণায় বিতর্ক, ফিলিস্তিন ‘সন্ত্রাস’ স্বীকারে হতবাক মুসলিম বিশ্ব”


✍️ জনতার প্রতিধ্বনি অনলাইন ডেস্ক |
মধ্যপ্রাচ্যে রক্তঝরা দীর্ঘ সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর ঘোষণা—”ফ্রান্স এবার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে”, যা আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু এই ঘোষণার পর মুসলিম বিশ্বে শুরু হয়েছে গভীর বিতর্ক, শঙ্কা এবং ক্ষোভ।


🟠 কী বললেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট?

ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল মাখোঁর মতে—”দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই একমাত্র টেকসই শান্তির পথ। আমরা ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন—উভয়কেই রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছি।”

তবে এই ঘোষণার আড়ালে রয়েছে একটি শর্তভিত্তিক বাস্তবতা, যা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির মূলতত্ত্ব।
ফ্রান্সের নীতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে—“হামাস সন্ত্রাসী সংগঠন, এবং এটি ফিলিস্তিন সরকারের (মাহমুদ আব্বাসের) স্বীকারোক্তিও।”
ফলে ফিলিস্তিনকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সেখানে কোনও স্বাধীন প্রতিরক্ষা নীতি, প্রতিরোধ গড়ে তোলার অধিকার থাকছে না।


🔵 ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট কী বললেন?

ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস লিখিতভাবে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন—

“আমরা হামাসকে স্বীকার করি না। ওরা সন্ত্রাসী। ফিলিস্তিন একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।”

এই অবস্থান বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের মনে একটাই প্রশ্ন উত্থাপন করেছে— “যারা রক্ত দিয়ে ভূমি রক্ষা করেছে, যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে, তারা কি তাহলে এখন সন্ত্রাসী?”
আর যাদের হাতে লক্ষ লক্ষ শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষের রক্ত, তারা কি ‘শান্তিকামী’?


⚠️ মুসলিমদের চোখে প্রশ্ন: এ কেমন স্বীকৃতি?

এই স্বীকৃতি এমন এক ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’-এর ভিত্তি তৈরি করছে,

যেটির ভূখণ্ড থাকবে ছিন্নভিন্ন,

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে,

প্রতিরোধের অধিকার থাকবে না,

গাজা থাকবে আলাদা প্রশাসনের আওতায়,

আর প্রতিরোধী সংগঠনগুলোকে ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করে তাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলা হবে।

অর্থাৎ, একটি “দাঁতহীন সিংহ” বানিয়ে সেই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে—যার কোনও সাহস থাকবে না রক্ষা করার, যুদ্ধে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।


🔴 লক্ষ মানুষের রক্ত, কান্না, এবং আত্মত্যাগ—সব কি মূল্যহীন?

এই স্বীকৃতির মাধ্যমে,

নখদন্তহীন এক ফিলিস্তিন তৈরি হচ্ছে,

যে রাষ্ট্র শুধু জাতিসংঘে পতাকা ওড়ে, কিন্তু মাটি বাঁচাতে পারে না।

হামাসসহ প্রতিরোধ সংগ্রামীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে হাজার হাজার শহীদের আত্মত্যাগকে অস্বীকার করা হচ্ছে।

অথচ, যারা ফসফরাস বোমা ছুঁড়েছে, হাসপাতাল-স্কুল ধ্বংস করেছে, তারা ‘শান্তি প্রিয়’ হয়ে যাচ্ছে।


🟡 প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্বীকৃতি আসলে একধরনের রাজনৈতিক নাটক।
স্বাধীনতার নামে একদিকে একটি পক্ষকে পূর্ণ সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সুবিধা দিয়ে রাখা হচ্ছে—
অন্যদিকে, যারা আত্মরক্ষার জন্য লড়ছে, তাদেরকেই বলা হচ্ছে “সন্ত্রাসী”।


🔚 শেষ কথা

এই স্বীকৃতি যদি হয় আত্মসমর্পণের বিনিময়ে, যেখানে ফিলিস্তিনের নিজস্ব শক্তি থাকবে না,
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—
এটা কি সত্যিই স্বাধীনতা? নাকি এক প্রহসন মাত্র?
আর মাহমুদ আব্বাস কি আদতেই ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করছেন? নাকি শুধু চিঠি লিখে ‘স্বাধীনতা’ বিক্রি করে দিলেন বিশ্ব মোড়লদের কাছে?

Spread the love

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *