ভারতের রাজনীতিতে ধর্মনির্ভর বিভাজন আজ নতুন কিছু নয়। বর্তমান বিজেপি সরকার ও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশটিতে “হিন্দু রাষ্ট্র” প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অনেকটাই প্রকাশ্য। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA), জাতীয় নাগরিক তালিকা (NRC), মসজিদ ভাঙা, হিজাব নিষিদ্ধকরণ, মুসলিমদের হুমকি দিয়ে “পাকিস্তানে চলে যাও” বলার মতো বক্তব্য—এসব যেন প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এইসব অবস্থানকে তারা “রাষ্ট্রীয় নীতিমালা” বললেও, প্রকৃতপক্ষে এটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা ও বৈষম্যের প্রকাশ।কিন্তু আশ্চর্যজনক ও দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশেও কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইসলামপন্থী বা মুসলিম পরিচয়কে কেন্দ্র করে একই ধরণের বক্তব্য দিতে শুরু করেছে। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে কেউ মত প্রকাশ করলেই বলা হয়—“পাকিস্তানে চলে যান”! কেউ ইসলামিক রাজনীতি বা সামাজিক ন্যায়ের কথা বললেই তার প্রতি জিহাদী কিংবা মৌলবাদী তকমা সেঁটে দেওয়া হয়।প্রশ্ন হলো—বাংলাদেশ কি তাহলে ভারতে চলমান “হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি”-এর প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠছে?বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। সংবিধানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত, আবার একই সাথে সকল ধর্মের অধিকার ও স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ভারসাম্যের মূলে রয়েছে এক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যেখানে ধর্মের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার ছিল অঙ্গীকারের অংশ।কিন্তু আজ যেসব মানুষ ইসলামী মূল্যবোধ, বিশ্বাস বা রাজনীতিকে কেবলমাত্র “পাকিস্তানি ভাবধারা” বলে আখ্যা দেয়, তারা নিজেদের অসচেতন, নাকি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে—এ প্রশ্নও উঠছে।তাহলে তাদের লক্ষ্য কী?তারা কি বাংলাদেশকে একটি ধর্মহীন, মূল্যবিমুখ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়?নাকি তাদের লক্ষ্য আরও গভীর?তারা কি আদতে বাংলাদেশকে ভারতের মতো একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়?এই প্রশ্ন আজ প্রতিটি সচেতন নাগরিকের বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ কাদের রাষ্ট্র—এটা নির্ধারণের সময় এখন। যারা ইসলামী বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে “অগ্রহণযোগ্য” হিসেবে তুলে ধরতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দাঁড়ানোই আজ সময়ের দাবি।
চলবে…..
