সলো ফ্লাইটেই শেষ উড়ান: পাইলট তৌকিরের বীরত্বপূর্ণ মৃত্যুতে বিমর্ষ আকাশ

সলো ফ্লাইটেই শেষ উড়ান: পাইলট তৌকিরের বীরত্বপূর্ণ মৃত্যুতে বিমর্ষ আকাশ

সলো ফ্লাইটেই শেষ উড়ান: পাইলট তৌকিরের বীরত্বপূর্ণ মৃত্যুতে বিমর্ষ আকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা |
রাজধানীর উত্তরার আকাশে আজ আর ছিল না কোনো নীলিমা—ছিল কেবল ধোঁয়ার ছায়া, শোকের ছাপ। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর তরুণ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির আজ তার সলো ফ্লাইট ট্রেনিং-এ শেষবারের মতো আকাশে উড়েছিলেন। এটাই ছিল তার ফাইটার পাইলট হবার পথে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কঠিন ধাপ—যেখানে একজন পাইলটকে এককভাবে যুদ্ধবিমান চালিয়ে প্রমাণ করতে হয় নিজের দক্ষতা, মানসিক দৃঢ়তা ও সাহসিকতা।

আজকের এই সলো ফ্লাইটে, কোনো কো-পাইলট, কোনো প্রশিক্ষক বা গাইড নয়—তৌকির একাই উড্ডয়ন করেন একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে, কুর্মিটোলা পুরাতন এয়ারবেস থেকে। তিনি রাজধানীর দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল ও রামপুরার আকাশে নিখুঁতভাবে বিমান পরিচালনা করছিলেন, ঠিক তখনই অনুভব করেন বিমানে কিছু অস্বাভাবিকতা।

“বিমান ভাসছে না, নিচে নামছে…” — শেষ সংকেত ছিল এই বাক্য

বিমানবাহিনীর কন্ট্রোল রুমে তৌকির শেষবারের মতো জানিয়ে যান, “বিমান ভাসছে না, মনে হচ্ছে নিচে পড়ছে…” কন্ট্রোল রুম থেকে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ইজেক্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু একজন প্রকৃত পাইলট শুধু নিজের জীবন নয়—চিন্তা করে মাটির নিচের প্রতিটি প্রাণের কথা।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ঠিক তেমনই করলেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করলেন বিমানটি জনবহুল এলাকা থেকে দূরে নিতে, সেটিকে বাঁচিয়ে বেসে ফিরিয়ে আনার।

মৃত্যুর আগেও দায়িত্ব ছাড়েননি এই সৈনিক

সবশেষে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক থেকে দেড় মিনিট পর, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ওপর বিধ্বস্ত হয় যুদ্ধবিমানটি। আগুন ধরে যায় স্কুল ভবনে, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। যদিও হতাহতের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি, তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি—ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের জীবনদানের গল্পটি, যা শুধু এক দুর্ঘটনা নয়, এক অবর্ণনীয় আত্মত্যাগ।

কারণ জানা যাবে তদন্তেই, কিন্তু সাহসিকতার প্রমাণ মিলেছে আজই

বিমানবাহিনী জানিয়েছে, সঠিকভাবে জানার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেবলমাত্র বিস্তারিত টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের মাধ্যমেই জানা যাবে, কোন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

কিন্তু আজই দেশ জেনেছে—একজন তরুণ পাইলট কীভাবে নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করলেন দায়িত্ববোধের চূড়ান্ত রূপ।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির আর নেই, কিন্তু তার সাহসিকতা, পেশাদারিত্ব এবং আত্মত্যাগ বাংলাদেশের আকাশে চিরকাল উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলবে।


🕊 জাতি হারাল এক সাহসী সৈনিককে, আকাশ হারাল তার আরেক অভিভাবককে।


🔖 এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা ও তদন্ত চলমান রয়েছে। পরবর্তী আপডেট জানানো হবে।

Spread the love

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *