বিপ্লবের পর বিপ্লবীদের বিচক্ষণতা জরুরি — না হলে পতন অনিবার্য
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক কালে দু’জন আলোচিত নাম—পিনাকী ভট্টাচার্য ও ইলিয়াস হোসেন। তারা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন, সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। কিন্তু বর্তমানে তারা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন, তা খুব একটা স্থায়ী নয়—তারা খুব শীঘ্রই মাটিতে পড়ে যাবেন, যদি আত্মসংযম না দেখান।
প্রতিটি বিপ্লবের পর একটি চিরন্তন বাস্তবতা সামনে আসে—বিপ্লবীদের অনেকেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিপথগামী হয়ে পড়েন। তারা ভাবতে শুরু করেন, পরিবর্তনের কৃতিত্ব শুধু তাদের; তারাই সব জানেন, তারাই সব বোঝেন। ফলে প্রতিটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন, সামান্য মতভেদেও অপমানিত বোধ করেন। এক সময় সেই অহংকারই তাদের মানসিক ভারসাম্য কেড়ে নেয়।
এর চেয়েও ভয়ানক একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—তাদের মতের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাকে ‘দালাল’, ‘সরকারের লোক’, কিংবা ভারতের ‘র’ এর এজেন্ট বলে হেয় করা হয়। এই একনায়কসুলভ মানসিকতা কেবল স্বৈরাচারের জন্ম দেয়, গণতন্ত্রের নয়।
তাই ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়—বিপ্লবের পরে বিপ্লবীদের উচিত ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে থাকা। এতে করে যারা ক্ষমতায় আসে, তারা বিপ্লবীদের সম্মান দিতে বাধ্য হয় এবং সেই সম্মান দীর্ঘস্থায়ী হয়।
কিন্তু পিনাকী ভট্টাচার্য ও ইলিয়াস হোসেন এখন যেভাবে প্রতিটি বিষয়ে অতি উৎসাহী হয়ে পড়ছেন, নিজেরাই নিজেদের মুখ্য চরিত্র বানাতে চাইছেন, তা শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
শুধু তারা নয়—আরো কিছু তরুণ বিপ্লবীও একই পথ অনুসরণ করছে। তাদের মুখে লাগাম নেই, আচরণে নম্রতা নেই। তারা ভাবছে, এখন তারা যা বলবে তাই হবে। এই অহংকার তাদের অন্ধ করে ফেলছে।
ঠিক যেমন করে শেখ হাসিনা এক সময় মনে করতেন—দেশটা শুধু তার বাবার, তাই যা খুশি তা করতে পারেন। আজ কিছু বিপ্লবীও সেই একই ভ্রান্ত ধারনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন।
এই অবস্থায় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি হলো—নিজেকে সংযত রাখা, মতভেদকে সম্মান করা, এবং এই সত্য মেনে নেয়া যে—দেশ কারো একার নয়, দেশ সবার।