স্বামীর লাশ তখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এর মধ্যেই শনিবার ভোরে প্রসবব্যথা তীব্র হয় পলির। শোকাতুর পরিবেশেই ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে বাড়িতে এক ছেলেসন্তানের জন্ম দেন পলি।
দুই দিন পর কোলজুড়ে আসবে সন্তান। এর আগেই স্বামী মো. রাশেদ বাড়িতে ফিরবেন, পাশে থাকবেন সন্তান জন্মের মুহূর্তটিতে—এ আশায় ছিলেন পলি আকতার। এর মধ্যেই এল দুঃসংবাদ—স্বামী রাশেদ পাড়ি দিয়েছেন না–ফেরার দেশে। গত শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরে নয়তলা ভবন থেকে পড়ে মৃত্যু হয় রাশেদসহ তিন নির্মাণশ্রমিকের। তিনজনই নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বাসিন্দা।
স্বামীর মৃত্যুর খবরে শুক্রবার দুপুর থেকে বাড়িতে কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন পলি আকতার। অনাগত সন্তানের প্রতীক্ষায় দিন কাটানো পলিকে অপেক্ষা করতে হয় স্বামীর লাশের জন্য। রাত যায়, ভোর হয়। স্বামীর লাশ তখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এর মধ্যেই গতকাল শনিবার ভোরে প্রসবব্যথা তীব্র হয় পলির। শোকাতুর পরিবেশেই সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বাড়িতেই এক ছেলেসন্তানের জন্ম দেন পলি।
গতকাল সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে তিন নির্মাণশ্রমিকের লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সুবর্ণচরের উদ্দেশে রওনা দেন স্বজনেরা। রাশেদের লাশ বুঝে নেন তাঁর চাচা মো. জামাল। যেতে যেতে জামাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাশেদ মারা গেল, আর তার স্ত্রী ছেলের জন্ম দিল। প্রসবের তারিখ ছিল ২২ জুলাই মঙ্গলবার, তবে রাশেদের মৃত্যুর ১৮ ঘণ্টা পর ছেলেটির জন্ম হয়েছে। ছেলের মুখটা দেখে যেতে পারল না রাশেদ। ছেলেটিও কখনো বাবাকে পাবে না।’
রাশেদ-পলি দম্পতির এটি দ্বিতীয় সন্তান। তাঁদের তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। বাবা যে মারা গেছে, মেয়েটি এসব কিছুই বুঝতে পারছে না। এর মধ্যে ছেলের জন্মে কোথায় খুশি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাড়িজুড়ে বিষাদের ছায়া।
রাশেদরা দুই ভাই ও দুই বোন। রাশেদ সবার বড়। তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা আবুল কালাম কৃষক। তিনিও অসুস্থ। রাশেদের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই কান্নাকাটি বাড়িজুড়ে। মা নিলুফা আকতার ছেলের জন্য কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। চাচা মো. জামাল বলেন, ‘একমাত্র আয়রোজগার করত রাশেদ। নির্মাণশ্রমিক হিসেবে চট্টগ্রামে থাকত। তার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিপদ যে এভাবে আসবে কে জানত। আজ (শনিবার) ছেলের জন্মে কত আনন্দ হতো বাড়িতে। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।’
গতকাল রাতে অন্ধকার ভেদ করে সাইরেন বাজিয়ে রাশেদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স এগিয়ে যায় বাড়ির উদ্দেশে। স্ত্রী পলি, মা নিলুফা, বাবা কালামসহ স্বজনেরা বাড়িতে রাশেদের অপেক্ষায়। বাড়ি পৌঁছাতেই রাশেদের নিথর দেহ জড়িয়ে আহাজারি করতে থাকেন পলি। পাড়াপ্রতিবেশীরা তখন ভোরে জন্ম নেওয়া ছেলের প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে সান্ত্বনা দেন। কেউ আবার আফসোস করতে থাকেন জন্মের ১৮ ঘণ্টা আগে বাবাহারা নবজাতকের জন্য।